আমাদের বাড়ির পাশে একটি খাল আছে যার নাম টংকাবতী। শুকনো মৌসুমে ফসলি জমির নীচে বড় বালুচর জেগে ওঠে, যেখানে আমাদের গ্রাম পাশের গ্রাম ও দূরবর্তী গ্রাম থেকে দলবেঁধে ছেলেরা ফুটবল খেলতে আসতো। মাঠ দখল নিয়ে আমাদের সাথে প্রায়ই মারামারি লেগে থাকতো। সেখানে অবশ্য আমাদের আধিপত্য বিস্তার ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই কথায় কথায় আমরা তাদের খোটা দিতাম যেন খালটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এই খোটা-খুটির ব্যাপারটি আমার ও আমাদের কাছে প্রথাগত শিক্ষা। যা আমাদের পরিবার ও সমাজ থেকে শেখা। পরিবার থেকে শিখেছি বেশি কামাই করা ছেলেটা ও তার বউ বাকিদের খোঁটা দিয়ে বলবে সবাই তার কামাই থেকে বসে বসে খাচ্ছে, কথায় কথায় আরো কত কি। সমাজ থেকে শিখেছি সমাজের কর্তারা বলবে তাদের পুকুর সবাই ব্যবহার করছে, তাদের বাপ-দাদার জমির উপর করে দেওয়া রাস্তায় সবাই হাঁটছে, তাদের বানানো মসজিদে সবাই নামাজ পড়ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই আমরাও তাদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সেগুলো নিয়মিত চর্চা করতাম। কারো সাথে একটু মনোমালিন্য হলেই বলতাম "আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে দেখিস, ট্যাং ভেঙে দিব"।
এই খোটা প্রথা বহুল প্রচলিত একটি প্রথা যা ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ থেকে রাষ্ট্রতে উন্নীত হয়ে ১৫টাকার সিট ও ৩৮টাকার পর্যন্ত চলে গেছে।
তবে খোটা দুই ধরনের হয়ে থাকে_
এক//
নিজের ব্যাক্তিগত সম্পূর্ণ মালিকানা বা আংশিক মালিকানার সম্পদ ব্যবহার করায় খোটা দেওয়া ।
দুই//
সমষ্টিগত মালিকানার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে বা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খোটা দেওয়া।
তবে প্রথম খোটার কিছু যৌক্তিকা থাকলেও দ্বিতীয়টা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বা বেয়াক্কেলর মত বলা যেতে পারে। এই অযৌক্তিক খোটা যে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাই এই খোটা-খুটির বিষয়ে আমার মনে হয় সংস্কার জরুরি। আমি বলছি না একদম বাদ দিতে,যেহেতু এটি একটি ঐতিহ্যগত প্রথা তাই এটি থাকুক এবং মানুষ মানুষকে যৌক্তিক খোটা দিক।
কবি ও সংগঠক মাসুদ পারভেজ |
No comments:
Post a Comment